স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাব-রেজিস্ট্রি ও জেলা রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে দুর্নীতির দুষ্টচক্র ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রারদের এ নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। রবিবার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নিবন্ধন অধিদফতরে স্বচ্ছতা ও জনবান্ধব পরিসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আপনারা নিজেরা মাঠপর্যায়ে চাকরি করেন। আমি সেখানে চাকরি করি না। তাই দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে অবশ্যই আপনাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রতিবন্ধকতা এলে আমি সহযোগিতা করব।
মন্ত্রী বলেন, আমরা কেন এই মানসিকতা তৈরি করতে পারব না যে, আমরা ঘুষ খাব না, আমরা সততার সঙ্গে কাজ করব এবং জনগণকে যথার্থ সেবা দেব। বলেন, এটি কঠিন কাজ নয়। আপনারা আমাকে এ কাজ করে দেখান আমি আপনাদের আনুষঙ্গিক প্রটেকশন এবং প্রিভিলিজ দেব। বলেন, জনগণের দাবি দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ দাবি কেন? ২৬ বছর জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া এই দেশ চালিয়েছেন। জনগণের অবস্থা হয়েছিল গরিব থেকে গরিবতর। তখন যারা সরকার চালিয়েছে তারা ছেড়া গেঞ্জি থেকে রাজ প্রাসাদ বানিয়েছে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেট সব মানুষের কাছে পৌঁছিয়েছি। এই পৌঁছানোর কারণে আজকে মানুষের প্রয়োজন একটা সুস্থ সমাজ। সুস্থ সমাজ করতে গেলে যেটা হয় সেটা হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। সেজন্যই সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মানুষের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে।
মন্ত্রী বলেন, আপনাদের সম্মান যত বৃদ্ধি করা হবে মানুষের চাহিদা কিন্তু ততই বাড়বে। এই চাহিদা পূরণ করা এবং এই সম্মান বজায় রাখতে গেলে আপনাদের সকলকে দুর্নীতিমুক্ত হতেই হবে। এই জিনিসটা আপনাদের যদি মাইন্ড সেটে থাকে তাহলে অনেক সমস্যাই আমাদের সমাধান হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে পারব। বলেন, আমার যে কথা সেই কাজ।
তিনি সাব-রেজিস্ট্রারদের সৎ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত থাকলে কেউ আপনাদের হয়রানি করতে পারবে না। বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান। তিনি তাঁর বাবা-মা ও ভাইদের হত্যাকা-ের পর ২১ বছর বিচার পাননি। ১৪ বছর মামলা চালিয়ে সেই বিচার আদায় করেছেন। তিনি বলেন, আইনের শাসন না থাকলে কি হয় তা প্রধানমন্ত্রী রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপলব্ধি করেছেন। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন আছেন ততদিন আইনের শাসনের বিরোধী কিছু হবে না।
তিনি বলেন, নিবন্ধন পরিদফতরকে অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে। জেলা রেজিস্ট্রারদের গাড়ি প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, নতুন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। অফিসগুলোর ক্যাটাগরি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। বদলির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আনা হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় একশভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নকলনবিসদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রয়োজনে আরও বৃদ্ধি করা হবে। তারা যাতে প্রতি মাসে পারিশ্রমিক পান সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। শূন্যপদে ১৫০ জন সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি নিবন্ধন কর্মকর্তাদের যুক্তিসঙ্গত দাবি পূরণ করার আশ্বাস দেন। কিন্তু অযৌক্তিক দাবি পূরণ করবেন না বলে জানান। নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক খান মোঃ আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে লজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক, যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা বক্তৃতা করেন।
পাঠকের মতামত: